আমরা প্রত্যেকেই জানি পৃথিবীতে সমস্ত প্রাণীদের দেহ লক্ষ লক্ষ কোষ (cell)দিয়ে গঠিত । আর এই কোষ তৈরী হওয়ার জন্য যা প্রয়োজন তা হল প্রোটিন , কার্ব হাইড্রেট , ফ্যাট , ভিটামিন এবং মিনারেলস এর সঠিক ভাগ । এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল প্রোটিন । পাখিকে শস্যদানার সাথে সাথে আমরা অনেক রকম নরম খাবার দিই যেমন ভাত , চিঁড়ে , ডিম সিদ্ধ , ছোলা , মুগ , ভুট্টা প্রভৃতি । বদ্রিকা , ককটেল টেল , লাভবার্ড ইত্যাদি পাখিদের অঙ্কুরিত খাদ্য এবং তার বাচ্চাকে নরম খাবার দিলে ভাল ফল পাওয়া যায়। অনেকের ধারণা বাচ্চাকে নরম খাবার খাওয়াতে পাখি মা-বাবার সুবিধা হয় । কিন্তু কেবল সুবিধা দেখলে হবে না দেখতে হবে সেই খাবার সুষম কিনা অর্থাৎ পাখির বাচ্চার বেড়ে ওঠায় তা কতটা সাহায্য করে । অবশ্য শুধু ভাত , চিঁড়ে , বিস্কুটের থেকে ভেজানো ছোলা ইত্যাদি অনেক উপকারী । আবার তার থেকে উপকারী ডিম সিদ্ধ । কেবল পাখির বাচ্চার জন্য নয় adultপাখিকেও নিয়মিত নরম খাবার দেওয়া উচিত ।
পাখি বা তার বাচ্চার সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকতে এবং বেড়ে উঠতে গেলে প্রয়োজন সুষম balanced খাবার যা তারা সহজে হজম করে শরীরের কাজে লাগাতে পারে । আমার মতে যে কোন অঙ্কুরিত শস্য এমন এক সুষম খাবার যার মধ্যে Protine , Vitamin ,Minarels , Enzyme (হজম কারক রস) এমন সুন্দর ভাগে থাকে যা পাখিদের যে কেবল খেতে ভাল লাগে তা নয় , তাদের শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখতে এবং জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে । আমরা পাখিকে যে সমস্ত খাদ্যশস্য খেতে দিই সেইসব খাদ্যশস্য ভিজিয়ে অঙ্কুরিত করলে তারমধ্যে এসবের পরিমাণ বেশ কিছুটা বৃদ্ধি পায় । শুধু তাই নয় বেশ কিছু amino acide যা পাখির প্রয়োজন এবং এমন কিছু এনজাইম তৈরী হয় যা হজমে সাহায্য করে ।
অঙ্কুরিত খাবার
আমরা যে সমস্ত খাদ্যশস্য অঙ্কুরিত করতে পারি সেগুলি হল ১। চীনা বাদাম ২। ব্ল্যাক সীড ৩। সানফ্লাওয়ার সীড ৪।সরষে ৫। ছোলা ৬। মুগ ৭। মুসুর ৮। ভুট্টা ৯। গম প্রভৃতি ।
কি করে অঙ্কুরোদগম করা যায় :-
প্রথমে হাল্কা গরম জলে যে খাদ্যশস্য কে অঙ্কুরোদগম করা হবে তাকে ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে । কেননা কোন ধরণের পোকা মারার ওষুধ দেওয়া থাকলে তা বেরিয়ে যায় ।এরপর একটা বড় কানা উঁচু থালায় জেল রেখে তার মধ্যে একটা ছোট পাত্র রাখতে হবে । সেই ছোট পাত্রের মধ্যে একটা সুতির কাপড় রাখতে হবে যার চারিধার থালার জলের মধ্যে ডুবে থাকবে । ভেজানো শস্য এই কাপড়ের মধ্যে অঙ্কুরোদগম হচ্ছে দেখা যাবে । এই অবস্থায় ভাল করে ধুয়ে যে কোন ধরণের পাখিকে খেতে দেওয়া যেতে পারে ।
এছাড়া এই অঙ্কুরিত শস্যকে জৈবসার দেওয়া মাটিতে দিয়ে আলোতে রেখে রোজ একটু করে জল দিলে ৫-৭ দিনের মধ্যে দেখা যাবে ছোট ছোট সবুজ পাখির দিলে অঙ্কুরিত শস্যের সঙ্গে সঙ্গে নিজের হাতে তৈরী কীটনাশক মুক্ত সবুজ খাদ্য ও পাখিকে দিতে পারা যাবে । এছাড়া পাখিরা সবুজ দেখে মনের আনন্দে খাবে এবং তারা শারীরিক ভাবে প্রভূত উন্নতি হচ্ছে ।
নরম খাবার
আমরা যে সমস্ত নরম খাবার পাখির বাচ্চা কে দিই সেগুলি হল (ক) ১। এক কাপ ভাত ২। গাজর ১ ইঞ্চি ৩। পেঁপে ।
এই খাবার বানানোর পদ্ধতি হল - ১ ইঞ্চি মাপের গাজর নিয়ে প্রথমে তার ওপরের খোসা ছুরি দিয়ে ছাড়িয়ে নিতে হবে । এরপর গাজরটিকে কুচি কুচি করে কেটে ফুটন্ত গরম জলে ফেলে দিতে হবে । ২-৩ মিনিট পরে জল থেকে ছেঁকে নিয়ে ঠাণ্ডা করতে দিতে হবে । এরপর পেঁপের টুকরোটি নিয়ে ছোট ছোট করে কাটতে হবে খোসা সমেত । তারপর এই গাজর ও পেঁপের টুকরো ভাতের সঙ্গে ভাল করে মিশিয়ে দিতে হবে ।
(খ) ১। ৩-৪ কাপ চিঁড়ে ২। ১ টা সিদ্ধ ডিম ৩। ১/২ কাপ অঙ্কুরিত ছোলা , গোটা মুগ ইত্যাদি । ৪। যে কোন শাকের ১০-১২ টি পাতা ।
পদ্ধতি – চিঁড়ে খুব ভাল করে ধুয়ে তার মধ্যে ১ কাপ ফুটন্ত গরম জল ঢেলে দিতে হবে । এরপর ১৫-২০ মিনিট ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করার জন্য ঠাণ্ডা জলে ফেলে দিতে হবে । ডিম ঠাণ্ডা হলে খোলা grater এ ঘষলে ডিমের সাদা অংশ এবং কুসুম সরু সরু টুকরোয় পরিণত হবে । এরপর অঙ্কুরিত ছোলা বা গোটা মুগ থেঁতো করে নিতে হবে এবং শাকের পাতাগুলি কুচি কুচি করে কেটে চিঁড়ে , ডিম , শাক , ছোলা বা মুগ এর সঙ্গে একসাথে ভাল করে মিশিয়ে দিতে হবে । তাহলেই সুস্বাস্থ্য সুষম নরম খাবার পাখির জন্য তৈরী হয়ে যাবে ।
(গ) ১। দুটো ডিম সিদ্ধ ২। চারটি থিন এরারুট বিস্কুট ৩। দেড় ইঞ্চি গাজর এবং ৪। ২ ইঞ্চি- আড়াই ইঞ্চি খোসা সমেত পেঁপে ।
পদ্ধতি – প্রথমে ডিম দুটোকে ১৫-২০ মিনিট সিদ্ধ করে ঠাণ্ডা করার জন্য তুলে রেখে দিতে হবে । বিস্কুট গুলোকে হাতে মিহি করে গুঁড়ো করে নিতে হবে । এরপর গাজরের টুকরোটি ও পেঁপের টুকরোটিকেও grater এ ঘসে ফুটন্ত গরম জলে ২-৩ মিনিট রেখে ভাল করে ছেঁকে নিতে হবে । এরপর সিদ্ধ ডিমের খোসা ছাড়িয়ে ডিমটিকেও grater এ ঘসে নিতে হবে । তারপর ঘসা ডিমের মধ্যে বিস্কুটের গুঁড়ো গাজর ও পেঁপে দিয়ে কাঁটা চামচ দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে দিতে হবে ।
(ঘ) ১। দেড় কাপ মোটা চিঁড়ে ২। ১ টা সিদ্ধ ডিম এবং ৩। তরকারীর-খোসা ।
খাবার বানানোর পদ্ধতি – চিঁড়ে ভাল করে ধুয়ে তাতে ফুটন্ত গরম জল দিয়ে ১৫-২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে । ডিমটি ভাল করে সিদ্ধ করে নিয়ে তারপর তরকারীর খোসা ভাল করে ধুয়ে প্রেসার কুকারে সিদ্ধ করে নিয়ে সুতির কাপড়ে ছেঁকে নিতে হবে। এরপর ভেজানো চিঁড়ে এবং ডিম সিদ্ধ grater এ ঘসে একসঙ্গে ভাল করে মিশিয়ে দিলেই তৈরী হয়ে যাবে বাচ্চার সুস্বাস্থ্য ও পুষ্টিকর নরম খাবার ।
এইরকম অনেক ধরণের পুষ্টিকর নরম খাবার ও অঙ্কুরিত খাদ্যশস্য পাখির ও বাচ্চার জন্য বানান যেতে পারে এবং এর সাথে সবরকম শাক যেমন- কলম, পালং , থানকুনি,তুলসী ইত্যাদি অল্প পরিমাণে মেশানো যেতে পারে । আমার মতে অঙ্কুরিত শস্য মিশিয়ে দেওয়া যায় । কিন্তু ফিঞ্চ বা স্প্যারো জাতীয় পাখির জন্য থেঁতো করে দেওয়ায় ভাল ফল পাওয়া যাবে ।
আশাকরি এই পদ্ধতিতে সঠিক খাবার প্রয়োগ করলে পাখি মা-বাবার শরীর এবং বাচ্চার লালন পালনে কোন অসুবিধা হবে না বা শরীরে যে ক্ষয় হয় তা রোধ করা সম্ভব ।
চড়ুই পাখির বাচ্চাকে কি খাওয়াবো?
ReplyDeleteডিম খাওয়াতে পারেন।
DeleteTuntuni pakhir baccha der ki khaoabo its emergency pakhir ma nei ekhon oder jibon amar abong apnar hate
ReplyDeleteOk
DeleteJust thanks again 😘
ReplyDeleteBulbuli pakhi r baby k ki khaoabo?
ReplyDeleteশালিকের বাচ্চাকে কি খাওয়াবো?
ReplyDelete