গ্রীষ্মকালে পাখির পরিচর্যা
আমরা প্রত্যেকেই পাখি পুষতে ভালোবাসি । বিশেষ করে বিদেশী খাঁচার পাখিদের ।খাঁচায় পাখি পোষা এবং তাদের কাছে থেকে তাদের ডাক ও গান শুনতে এবং তাদের যে সৌন্দর্য উপভোগ করার মধ্যে সত্যি একটা দারুণ সুন্দর আনন্দ আছে । আমার মতে শুধু পাখি পুষলেই যে তার আনন্দ উপভোগ করা যাবে তা কিন্তু নয় । এই পাখিকে সুস্থ ও সবল এবং চনমনে রাখার জন্য আমাদের প্রথম কাজ হল পাখির যত্ন । অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে গরম কালে পাখির যত্ন বা পাখিকে আমরা কিভাবে পরিচর্যা করব । আমদের দেশ সাধারণত: গ্রীষ্ম প্রধান হওয়ায় বিদেশী পাখিদের একটু সাবধানে রাখতে হবে এবং বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে । তাই গরমকালে পাখিকে সুস্থ রাখতে এবং হিটস্ট্রোক থেকে রক্ষা করতে হলে আমাদের কিছু কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে । যেমন-
১। গরমকালে বেশী গরম হলে পাখিকে বারে বারে সময়মত অর্থাৎ সকাল ১০ টা থেকে ১২ টার সময় স্নান করাতে হবে যাতে পাখির শরীর অতিরিক্ত গরম না হয়ে যায় এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকবে এবং ঠাণ্ডা লাগার সম্ভবনা কম থাকবে ।
২। পাখিকে সবসময় ঠাণ্ডা জল খেতে দিতে হবে এবং লক্ষ্য রাখতে হবে সময়মত পাখিটি সঠিক পরিমাণে জল খাচ্ছে কিনা ।
৩। পাখিকে কেবলমাত্র মাটির তৈরী পাত্রেই জল দিলে ভাল হয় । যেমন মাটির হাড়ী বা বড় কোন পাত্রে জল দিলে জল অনেকক্ষণ পর্যন্ত ঠাণ্ডা থাকে । ফলে পাখি সেই ঠাণ্ডা জল খেলে শরীর সুস্থ থাকে ।
৫। মাটির পাত্রে জল দেওয়ার পর পাত্রটিকে যেকোনো সুতির কাপড় বা লাল শালু কাপড় জড়িয়ে রেখে দিলে জল অনেকক্ষণ পর্যন্ত জল ঠাণ্ডা থাকবে ।
৬। আবার অনেকসময় গরমে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে পাখিকে ডাবের জলও খাওয়ানো যেতে পারে ।কারণ খুব গরমে ডাইরিয়া এবং বার্ড ফ্লু ও ভাইরাস জনিত রোগ হওয়ার সম্ভবনা বেশী থাকে । তাই পাখিকে ডাবের জল , নুন চিনির জল এবং তার সাথে কিছু অল্প পরিমাণে গ্লুকোজ দিলে পাখির শরীর তুলনামূলক ভাবে ঠাণ্ডা থাকবে।আপনি ব্যবহার করতে পারেন Aloe vera। যদি ডাইরিয়ায় আক্রান্ত হয় তাহলে সঠিক সময়ে ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী স্যালাইন ও ইলেক্ট্রোলাইট অবশ্যই দিতে হবে ।
৭। আবার যদি দেখা যায় পাখির সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে বেশী থাকে তাহলে একটি বড় মাপের মাটির পাত্রে জল দিলে পাখিদের জল খাওয়ার সুবিধা হবে এবং যদি প্রয়োজন হয় তাহলে খাঁচার বাইরে একটি টেবিল ফ্যান লাগিয়ে দিলে জল ও পাখির ঘরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকবে ।
৮। পাখির খাবার জল বার বার পাল্টে দিতে হবে কেননা নোংরা জল খেলে পাখির কোন সংক্রামক রোগের সৃষ্টি হতে পারে । তাই সকালের জল বিকেলে পাল্টে দিতে হবে এবং বিকেলের জল রাত্রে পাল্টে দিয়ে আবার নতুন করে পাত্রটিকে পরিষ্কার করে পরিষ্কার জল দিতে হবে ।
৯।পাখিকে প্রতিদিন চান করাতে হবে এবং পাখিদের জল সমেত একটি প্লাস্টিকের পাত্র এমন ব্যবস্থা করতে হবে তারা তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী স্নান করতে এবং বসতে পারে।
১০। পাখিকে খুব গরমে ১ টি করে সবুজ শাক-সব্জি এবং মৌসুমি ফলের রস পাখিকে দিলে ভাল ফল পাওয়া যাবে। এছাড়া অন্যসময়ে পাখিকে যে পরিমাণে প্রোটিন , ভিটামিন এবং মিনারেলস জাতীয় খাবার দেওয়া হত তার পরিমাণ গরমে খুব অল্প পরিমাণে দেওয়া উচিত । এছাড়া তৈলাক্ত জাতীয় খাবার যেমন সূর্যমুখী , তিল ও সরিষার পরিমাণও কম দিলে পাখি সুস্থ থাকবে।
১১। অতিরিক্ত গরমে পাখিদের রোগ জীবাণুর সক্রমনের সম্ভবনা বেশী থাকে । তাই এই সংক্রমণের হাত থেকে পাখিদের রক্ষা করার জন্য মাসে ২ থেকে ৩ দিন গরম জলে নিমপাতা সিদ্ধ করে জল ঠাণ্ডা করে সেই জল দিয়ে পাখিকে স্নান করালে পাখির শরীরে যদি কোন সংক্রমক জীবাণু থেকেও থাকে তা রোধ করা সম্ভব হবে বলে আমার ধারণা ।
১২। পাখির খাঁচা বা পাখির ঘর গরমকালে অতিরিক্ত গরম না হয় তারজন্য খাঁচার বাইরে exhaust fan এর ব্যবস্থা করতে হবে যাতে পাখির ঘরের তাপমাত্রা বাইরের তাপমাত্রার তুলনায় কম থাকে ।
আমার মতে এই সমস্ত কিছু লক্ষ্য করে গরমকালে পাখিদের দেখাশোনা ও যত্ন করলে পাখি সুস্থ , সবল ও চনমনে থাকবে
No comments:
Post a Comment