লাভ বার্ডকে সাধারণতঃ আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়। এই পাখিকে অনেকটা টিয়া পাখির মত দেখতে হলেও আকার ও পরিণত বয়সের দিক থেকে অনেক ছোট হয় । এরা সারা পৃথিবীতে শুধু জনপ্রিয় হয়ে আছে তা নয় ভালবাসার প্রতীক হিসেবেও পরিচিত । এই লাভ বার্ড প্রধানত তিন ধরণের হয় । যেমন- ১।রোজি লাভ বার্ড বা পীচ ফেসড লাভ বার্ড (Agaparnis nosciollis) ২। মাস্কড লাভ বার্ড(Agapornis personata) এবং ফিসারস লাভ বার্ড (Agapornis fischeri) । এরা প্রত্যেকেই লম্বায় প্রায় সাড়ে পাঁচ ইঞ্চি বা ১৪ সেন্টিমিটার থেকে ৬ ইঞ্চি বা ১৫ সেন্টিমিটার অবধি হয় ।
রোজি লাভ বার্ড এর গায়ের রং সবুজ এবং মুখের কাছের রং লালচে হয় । শুধু তাই নয় রং এর দিক থেকে এই রোজি লাভ বার্ডকে অনেক ভাগে ভাগ করা যায় । যেমন- গায়ের রং নীল বা ব্লু এবং গায়ের রং হলুদ বা লুটিনো রোজি ইত্যাদি । সেইরকম মাস্কড লাভ বার্ড এবং ফিসার লাভ বার্ডেরও রং এর পার্থক্য থাকে । নানা রং-এর মিশ্রণ , ছটপটে স্বভাব ও সহজেই খাঁচায় এরা প্রজনন করায় সারা পৃথিবীতে এদের স্থান অর্জন করে আছে ।
খাবার : লাভ বার্ডকে সাধারণতঃ খাবার হিসেবে কাঁকর জাতীয় দানার সাথে সামান্য তৈলাক্ত জাতীয় খাবার যেমন সানফ্লাওয়ার সীড , কুসুমদানা ও ব্ল্যাক সীড দেওয়া উচিত । সুস্থ ও সবল স্বাস্থ্যের খেয়াল রেখে অঙ্কুরিত শস্য দানা যেমন ভেজানো ছোলা , গম , মুগ ইত্যাদি অল্প পরিমাণে দেওয়া উচিত । এছাড়া সবুজ শাক সব্জি , বরবটি সপ্তাহে অন্তত ৪ দিন দেওয়া উচিত । এই সমস্ত খাবারের সাথে সাথে কিছু ক্যালসিয়াম , ফসফরাস এবং মিনারেলস জাতীয় খাবার যেমন সমুদ্রের ফেনা ইত্যাদি অবশ্যই রাখা উচিত এবং পাখি অতি সহজেই তাদের খাবার হজম করে নিতে পারে তার জন্য একটি পরিষ্কার কাঠকয়লা ও সন্ধব নুন রেখে দেওয়া উচিত ।
নর ও মাদা পাখি চেনার উপায় : পোষ্য পাখি হিসেবে সারা পৃথিবীতে জনপ্রিয় হলেও নর মাদা চেনার ব্যাপারে সব থেকে অসুবিধায় পড়তে হয় এই লাভ বার্ডকে নিয়ে । অনেকের মতে
১। মাথার আকারের পার্থক্য অনুযায়ী নর মাদা আলাদা করে চেনা যায় ।
২। আবার অনেকে pelvic bone এর গঠনের পার্থক্য অনুযায়ী নর মাদাকে আলাদা করেন ।কিন্তু অপরিণত বয়সে এই পেলভিক বোনের গঠনগত পার্থক্য বোঝা একেবারেই সম্ভব হয় না । একমাত্র ডিম পাড়ার আগে এই পেলভিক বোনের গঠনগত আকৃতির তফাৎ লক্ষ করা যায় ।
৩। অনেক ক্ষেত্রে বাচ্চা অবস্থায় এদের গায়ের রং বেশ কিছুটা মা বাবার মতোই হয়। যত পরিণত হতে থাকে রং এর গাঢ়ত্ব ও উজ্জ্বলতা বাড়তে থাকে । এবং
৪। আর ও একটি চেনার উপায় হল ছোট বেলায় বাচ্চা লাভ বার্ডের ঠোঁটের রং একটু কালচে হয় ।
প্রজনন : লাভ বার্ড ৮ থেকে ১০ মাস বয়সেই পরিণত পাখির মত আচরণ করলেও এমনকি কখনও কখনও ডিম পেড়ে ডিমের রক্ষণা বেক্ষনে নিজেদেরকে নিয়োগ করলেও এদের প্রজননের সবথেকে ভাল সময় হল ১৩ থেকে১৪ মাস বয়স । বদ্রিকা ককটেলের মত লাভ বার্ডকে পক্ষীশালায় প্রজনন করান যায় না । কারণ এরা শান্ত প্রকৃতির না হওয়ায় বাসা দখলের জন্য এরা প্রচণ্ড মারপিট করে ও একে অন্যকে মেরে ফেলে । এই কারণে ১ জোড়া করে ছোট খাঁচা ২৩’’×১৮’×’১৮’’মাপের খাঁচায় রেখে প্রজনন করলে সুস্থ ও সবল এবং চনমনে পাখির বাচ্চা পাওয়া যাবে । এছাড়া লাভ বার্ডকে বাসার জন্য হাঁড়ি বা কাঠের বাক্স দুই-ই দেওয়া হয় । কলসির আকারে বদ্রিকা পাখির মত একটু বড় হাঁড়ি লাভ বার্ডের পক্ষে আদর্শ । এই হাঁড়ির গলার কাছাকাছি দুই থেকে আড়াই ইঞ্চি ব্যাসের গর্ত করে দিতে হয় । ফলে এদের বাইরে ও ভেতরে প্রবেশ করার জন্য কোন অসুবিধা না হয় তার জন্য বাস্কের মাপ সবদিক থেকে ৬ ইঞ্চির বা ১৫ সেন্টিমিটার করা হয় ।
এদের বাসা তৈরী করার জন্য উপকরণের প্রয়োজন হয় । অনেকে প্লাই-এর টুকরো আবার অনেকে খেজুর পাতার টুকরোর ব্যবহার করেন । রোজি লাভ বার্ড তেমনভাবে বাসা না বানালেও ফিসার লাভ বার্ড খুব সুন্দর করে এই উপকরণের সাহায্যে বাসা বানায় । বাসা বানানো শেষ হলে ৫ থেকে ৬ টি ডিম একদিন অন্তর পাড়ে । ২৩ থেকে ২৭ দিনের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয় । প্রথম দিন থেকে বাচ্চা হাঁড়ির বাইরে বেরনো পর্যন্ত বেশির ভাগ সময়ই মাদা পাখি বাচ্চাদের খাওয়ায় এবং ৪২ থেকে ৪৫ দিনের পর বাচ্চা হাঁড়ি থেকে বেরিয়ে আসে এরপর ১৫ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত মা বাবার কাছে রাখার পর বাচ্চাদের আলাদা করে দিতে হয় । এই লাভ বার্ড প্রায় ১০ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে । এমনকি ভাল খাবার ও যত্নের ফলে লাভ বার্ডকে ৯ থেকে ১০ বছর বয়স পর্যন্ত প্রজনন করতে দেখা গেছে ।
No comments:
Post a Comment