পাখি পোষা এবং বাড়ীতে খাঁচায় তার বাচ্চা পাওয়ার মধ্যে সত্যিই একটা দারুণ সুন্দর আনন্দ আছে । অনেকে শখে বাচ্চা তোলেন অনেকে আবার ব্যবসার জন্য বাচ্চা তোলেন । সে যে যাই উদ্দেশ্যে বাচ্চা তুলেন না কেন মনের আশা পরিপূর্ণ হয় তখনই যখন ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বড় হয়ে বাসা থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে । কিন্তু এই সময়ের মধ্যে অনেক সময়ে নানা দুর্ঘটনা ঘটে । ডিম থেকে বেরোনোর পর নিজে খেতে শেখা পর্যন্ত অনেকসময় বাচ্চা মারা যায়। সত্যিই একটা দুঃখ জনক ব্যাপার । ভাল খাবার দিয়ে পরিষ্কার রেখে যত্ন করার পরও যদি এরকম ঘটনা ঘটে তাহলে সত্যিই দুঃখ জনক । এই সব কিছুই হবে না যদি একটু ভাল করে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা ভাবনা ও একটু আলোচনা করা জায়। অবশ্য আমাদের দেশে আলোচনা করার মত লোকের অভাব থাকলেও কিছু ব্যক্তি এমনও আছেন যারা গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করেন এবং ভাল কিছু করার জন্য এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন । এমন কিছু আলোচনার ফল এবং নিজের অভিজ্ঞতা থেকে পাখির ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার পর নিজে খেতে শেখার আগে পর্যন্ত মারা যাবার কারণ ও তার প্রতিকারগুলি নিচে আলোচনা করা হল –
১। Genetic কারণে বাচ্চার দুর্বলতার কারণে ডিম ফুটে ২-১ দিনের মধ্যে বাচ্চার মৃত্যু হয় । এই কারণ খুবই কম দেখা যায় । এর একমাত্র প্রতিকার হল সেই পাখির জোড়াটিকে পাল্টে দেওয়া ।
২। বাচ্চার জন্য দেওয়া নরম খাবার পচে গিয়ে বা দানা ভিজে গিয়ে নষ্ট হয়ে গেলে তা বাচ্চার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায় । বয়স্ক পাখি মা-বাবার ক্ষতি না হলেও বাচ্চার ভীষণ ক্ষতি হয় । সবসময়ে খুব ভাল করে দেখে খাবার দেওয়া উচিত এবং পড়ে থাকা নরম খাবার ৪-৫ঘণ্টার পর বের করে নেওয়া উচিত ।
৩। প্রজননের জন্য দেওয়া বাসা পরিষ্কার করার সময় বা বাচ্চাকে ঠিকমত খাইয়েছে কিনা তা দেখা দরকার । বাসা থেকে খুব ছোট বাচ্চাকে বাইরে বেশীক্ষণ রেখে দিলে বাচ্চা ঠাণ্ডা হয়ে পরে মারা যেতে পারে । তাই প্রথমত: খাঁচা থেকে বাচ্চা বের করার সময় হাত একটু গরম করে নিতে হবে এবং খুব তাড়াতাড়ি কাজ সেরে বাচ্চাকে খাঁচায় রেখে দিতে হবে ।
৪। বাচ্চার পায়খানায় অনেক সময় খাঁচায় বা বাসার ভেতরে ভিজে থাকে । এই ভিজে স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে বাচ্চার ঠাণ্ডা লাগার সম্ভবনা থাকে প্রচুর এবং এত ছোট বাচ্চার ঠাণ্ডা লেগে গেলে তার মৃত্যু অনিবার্য । যে কারণেই মাঝে মাঝেই বাসা ভালকরে পরিষ্কার করে দেওয়া উচিত ।
৫। আবার অনেকসময় দেখা যায় সদ্যজাত বাচ্চার খাদ্য থলিতে আস্ত দানা যা পাখির বাচ্চার পক্ষে হজম করা সম্ভব নয় এবং ফলস্বরুপ বাচ্চার মৃত্যু ঘটে । এটা বেশীরভাগ সময়ই অনভিজ্ঞ পাখি মা-বাবার জন্য হয়ে থাকে । প্রথমবার বাচ্চা হওয়ায় তারা বুঝতে পারে না বাচ্চাকে কিভাবে খাওয়াতে হবে। এই অবস্থা থেকে বাচ্চাকে বাঁচাবার সহজতম উপায় হল অন্য কোন বাসায় যেখানে সমান বয়সী বাচ্চা আছে সেখানে রেখে দেওয়া । অথবা সেই অনভিজ্ঞ মা-বাবার কাছে রেখে তাদের কাছ থেকে দানা সরিয়ে নিয়ে সারাদিন অন্তত ৪-৫ বার নরম খাবার দেওয়া উচিত । বাচ্চার বয়স যদি ৪-৫ দিন হয় তাহলে তখন ধীরে ধীরে অল্প করে দানা শস্য দিলেও বদ হজম হয়ে মারা যাওয়ার ভয় থাকবে না ।
৬। অনেকসময়ে দেখা যায় সদ্যজাত বাচ্চা শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যেতে । এর কারণ হল সাধারণত: বাসায় যখন কেবলমাত্র একটি বাচ্চা থাকে তখন মা-বাবার চাপে বাচ্চা নিশ্বাস নিতে পারে না । আবার অনেকসময় দেখা যায় কোন বাসায় একটি মাত্র ডিম fertile হয়েছে তখন বাচ্চা ফুটে ৩-৪ দিন বয়স হওয়ার আগে অন্য unfertile ডিম বের করে নেওয়া উচিত নয় ।
৭। আবার বাচ্চা যদি ৩-৪ দিন বয়স হওয়ার পর খারাপ ডিম ফেলে দেওয়া উচিত তা না হলে সেই fertile ডিম বা সদ্যজাত বাচ্চা অন্য বাসায় যেখানে আরও আছে সেখানে রেখে দেওয়া উচিত ।
৮। অনেকসময় দেখা যায় সদ্যজাত বাচ্চাকে না খাওয়াবার ফলে মারা যাচ্ছে । এর পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে যেমন-(ক) পাখির মা-বাবার বয়স ঠিক না হলে তারা বুঝতে পারে না ঠিক কি করা উচিত বা কোনটা উচিত নয় ।(খ) মা পাখির বাচ্চা ফোটার সময়ে সুস্থ না থাকলে ।এবং(গ) পাখির জাত অনুযায়ী বাচ্চা জন্মানোর প্রথম ২-৪ দিন অবধি পাখিকেই বেশী খাওয়াতে দেখা যায় । সবশেষে আরও একটি অন্যতম কারণ হিসেবে বলা যায় যে
৯। বাচ্চার খাদ্য থলিতে খাবার কম অথচ হাওয়া ভর্তি ।এটা ভুলভাবে খাওয়ানোর ফলে হয় । খুব ধীরে ধীরে খাদ্য থলিতে চাপ দিলে হাওয়া বেরিয়ে যাবে । এছাড়া আরও একটি ভাল উপায় হল সবচেয়ে সরু ইনজেকশন এর ছুঁচ দিয়ে হাওয়া থলিকে ফুটো করে হাওয়া বের করে দেওয়া ।
আশাকরি এইভাবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলেই বাসায় পাখির বাচ্চার যে ক্ষতি অর্থাৎ বাসায় বাচ্চা মারা যায় তা রোধ করা সম্ভব।
No comments:
Post a Comment