পাখি পোষা এবং বাড়ীতে তার বাচ্চা পাওয়ার মধ্যে সত্যিই এক দারুণ ও সুন্দর আনন্দ আছে । সারা ভারতবর্ষ জুড়ে খাঁচায় প্রজনন করা, বিদেশী পাখি কেনা বেচা হয় । কিন্তু একথা সকলের মনে রাখা উচিত এবং গর্ব করা উচিত যে বিদেশী খাঁচার পাখির বাচ্চার জন্মের হার সারা ভারতবর্ষের মধ্যে প্রথম । এই পাখির ডাক শুনতে শুনতে প্রায় প্রত্যেকেই এমন একটা সময়ে এসে উপস্থিত হন যে , এই সুন্দর পাখির যদি বাচ্চা হত তাহলে কি ভালই না হত । কিন্তু কি করে এই কল্পনা বাস্তবে পরিণত হবে ? নানা প্রশ্ন জাগে সকলের মনে । চলে নানান ধরণের পরিকল্পনা । পাখির বাচ্চা বাড়ীতে পেতে গেলে কতকগুলি জিনিস আমাদের মনে রাখা বা জেনে রাখা প্রয়োজন । যেমন –
১। সুস্থ পাখি কেনা
২। পাখি দুটি জোড়া অর্থাৎ ছেলে male এবং মেয়ে female আছে কিনা ।
৩। প্রজননের (breeding ) জন্য খাঁচার মাপ ।
৪। সঠিক খাবার
৫। ডিম পাড়ার জন্য বাসা ।
৬। সঠিক বয়স নির্বাচন । এবং
৭। সঠিক সময় নির্বাচন ।
১। সুস্থ পাখি কেনা : কি করে বুঝব পাখিটি সুস্থ কিনা । প্রথমেই দেখতে হবে পালক ফুলিয়ে আছে কিনা । এরপর তার কাছে গিয়ে দেখতে হবে নাক বা চোখের পালক ভেজা আছে কিনা । ভেজা থাকলে বুঝতে হবে পাখিটি অসুস্থ । এরপর দেখা উচিত পাখির ঠোঁট ও নখ । যদি ঠোঁট ও নখ ছোট বড় বা বাঁকা হয় তাহলে তা পাখিটি অসুস্থ বলে মনে হয় । আবার অনেক সময় পাখির গায়ের কোন অংশে পালক না থাকা অবশ্য বেশীরভাগ ক্ষেত্রে তা ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যায় । এত কিছু লক্ষ করে তবেই পাখি কেনা উচিত ।
২। পাখি দুটি জোড়া অর্থাৎ ছেলে (male) এবং মেয়ে (female) আছে কিনা : পাখির জোড়া নির্বাচন করা খুবই কঠিন ব্যাপার । সাধারণত: আমাদের পাখি কেনা উচিত কম বয়সের । কারণ পাখি নতুন জায়গায় এসে প্রথম প্রথম ভয় পায় । ভয় পেয়ে থাকলে তারা কোন ভাবেই প্রজনন করবে না । এমনকি অসুস্থ হয়েও পড়তে পারে । অভিজ্ঞ পক্ষিপালকরা তাদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী অতি সহজেই এই কাজ সমাধান করে থাকেন । যেমন –
(ক) সাধারণত: যে কোন প্রজাতির পাখির ছেলে পাখির মাথা মেয়ে পাখির থেকে সামান্য হলেও বড় হয় ।
(খ)দাঁড়ে বসা অবস্থায় সামনে থেকে পায়ের অবস্থান দেখলে দেখা যায় মেয়ে পাখির দুটি পায়ের মধ্যেকার ফাঁক ছেলে পাখির থেকে সামান্য বেশী থাকে ।
এই হল সাধারণভাবে দেখে পাখি ছেলে না মেয়ে চেনা এছাড়া পাখির প্রজাতি অনুসারে নানারকম ভাবে ছেলে , মেয়ে , বোঝা যায় । যেমন – জেব্রা ও ফিঞ্চ পাখির জন্য পুরুষ পাখির ঠোঁট ও পায়ের রং মেয়ে পাখির চেয়ে অনেক গাঢ় হয় ।
(গ) বদরী পাখির ঠোঁটের ওপরে নাকের অংশের রং হয় নীলচে , অন্যদিকে মেয়ে পাখির রঙ হয় খয়েরি ।
(ঘ) ককটেল পাখি ছেলের ক্ষেত্রে পাখির গালের পাশে দাগ অনেক গাঢ় হয় মেয়ে পাখির থেকে । এবং
(ঙ) কিন্তু আটকে যেতে হয় বেঙ্গলি ফিঞ্চ এবং লাভ বার্ডের ক্ষেত্রে । কেননা শারীরিক দিক থেকে গঠন বা পালকের রং দেখে এদের বোঝা প্রায় অসম্ভব যে কোনটা ছেলে আর কোনটা মেয়ে পাখি ।
৩। প্রজননের জন্য খাঁচার মাপ : পাখি অনুসারে খাঁচার মাপ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরণের মাপ পরিবর্তন করা হয়ে থাকে । তবে পাখির প্রজননের জন্য খাঁচাটির আকার বিভিন্ন হলেও আয়তকার খাঁচাই বেশী প্রয়োজন । যেমন –
পাখির নাম প্রজননের সময় সাধারণ সময়
(ক)বদরী ২০’’×১৫’’×১৫’’ ২৪’’×১৫’’×১৫’’
(খ) জেব্রা ফিঞ্চ ১৮’’×১২’’×১২’’ ২০’’×১৪’’×১৪’’
(গ)বেঙ্গলি ১৮’’×১২’’×১২’’ ২৪’’×১৫’’×১৫’’
(ঘ লাভ বার্ড ২৪’’×১৮’’×১৮’’ ৩০’’×১৮’’×২৪’’
(ঙ) ককটেল ১৮’’×২৪’’×২৪’’ ৩৬’’×১৮’’×২৪’’
(চ) স্টারফিঞ্চ ১২ ‘’×২৫’’×১৫’’ ২৪’’×১৫’’×১৮ ’’
৪। ডিম পাড়ার জন্য বাসা : খাঁচায় পাখির জোড়া নির্বাচন করার পর এরপর প্রয়োজন হয়ে পড়ে ডিম পাড়ার জন্য জায়গা বা বাসা । পাখিদের একটি পরিষ্কার পরিছন্ন এবং সুরক্ষিত জায়গায় রাখতে হবে, যেখানে পাখিটি অনায়াসে ভয় না পায় এবং বিরক্ত না হয়ে ডিমে তা দিয়ে নিশ্চিন্তে তার বাচ্চাদের বড় করতে পারবে । কেননা পাখিদের ও নানান পছন্দ ও অপছন্দও আছে । নানান পাখির নানান চাহিদা কেউ চায় বাঁশ বা বেতের সমান ঝুড়ি আবার কেউ কাঠের বাক্স বা মাটির তৈরী হাঁড়ি চায় । যেমন-
পাখির নাম বাসা
(ক) জেব্রা ফিঞ্চ বেত বা বাঁশের তৈরী ঝুড়ি অথবা কাঠের বাক্স (৫’’×৫’’×৫’’)
(খ) বেঙ্গলি ,,
(গ)গোল্ডিয়ান ফিঞ্চ ,,
(ঘ) বদরী পাখি মাঝারি সাইজের মাটির হাঁড়ি বা কাঠের বাক্স ।(ঙ) ককটেল বড় মাটির হাঁড়ি বা কাঠের বাক্স ।
(চ) লাভবার্ড বদরী পাখির থেকে সামান্য বড় হাঁড়ি বা কাঠের বাক্স ।
(ছ) জাভা বদরী পাখির মাপের হাঁড়ি তবে একটু লম্বাটে হলে ভাল হয় ।
উপরে যে সমস্ত পাখির কথা উল্লেখ করা হল তার মধ্যে বদরী এবং ককটেল ছাড়া সব পাখির বাসা তৈরীর জন্য কিছু না কিছু প্রয়োজন হয় । যেমন ফিঞ্চ গোত্রের পাখির বেঙ্গলি এবং জাভার বাসা তৈরীর জন্য নারকেল ছোবড়া বা শুকনো ঘাস ব্যবহার করা ভাল । তবে কোনটাই যেন ১/২’’-২’’ বেশী না হয় এবং জাভা পাখির জন্য খেজুর পাতার তৈরী ঝাঁটা ২’’মত কেটে দিলে ভাল হয় । এছাড়া লাভবার্ডের ক্ষেত্রে পাতলা প্লাই এর টুকরো বা আখের ছিবড়ে ব্যবহার করা হয়।
৫। সঠিক খাবার : পাখিকে শস্যদানার সাথে সাথে সুষম খাদ্য দেওয়া অতি আবশ্যক । এই সুষম খাদ্যে ভিটামিন , প্রোটিন এবং মিনারেলস সমান ভাগে থাকে । যদি পাখিটিকে প্রজনন করার জন্য তৈরী করতে হয় তাহলে পাখির শরীরে যা যা প্রয়োজন হয় তা পাখির সাধারণ অবস্থায় সুস্থভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে একটু আলাদা । কারণ পাখি যখন (fertile) ডিম পাড়তে সক্ষম হয় তখন নর এবং মাদা পাখি দুটি শারীরিক ভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ থাকে । অর্থাৎ কার্বোহাইড্রেট , ফ্যাট , প্রোটিন থেকে শুরু করে সমস্ত ভিটামিন এবং মিনারেলস বিশেষ করে calcium সঠিক মাত্রায় তার শরীরে যেন অবশ্যই থাকে । প্রকৃতির পাখিরা প্রজননের সময়ে নিজেরাই তাদের সঠিক খাবার সরবরাহ করে নিতে পারে । কিন্তু আমাদের খাঁচায় পোষা পাখিদের একটু বিশেষ ভাবে লক্ষ্য রেখে তাদের প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহ করতে হবে । এছাড়া পাখি যখন প্রজনন করা হবে তার ১ মাস আগে সুষম খাবারের সাথে সাথে deworming বা ক্রিমির ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে । Deworming করার পর তাদের ৫-৭ দিন পর পর Fat soluble vitamins এবং calcium ১-২ দিন বাদে দিতে হবে পাখিকে ।
আশাকরি পক্ষিপালক বন্ধুরা উপরিউক্ত পাখির প্রজননের যে সমস্ত জিনিস ও ধারণাগুলি আলোচনা করা হল সেই সমস্ত কিছুই মনে রেখে মেনে চললেই কোন অসুবিধা হবে না
No comments:
Post a Comment